Header Ads

মহামায়া ঝরনায় যেতে যেতে

মহামায়া ঝরনায় যেতে যেতে

 মহামায়া লেকের গেটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা প্রায় ১টা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দ্বারা যাওয়া-আসার সময় মিরসরাইয়ের এই জায়গাটায় অনেকবার লেকের সাইনবোর্ড নয়নে পড়েছে, তা সত্ত্বেও নেমে দেখা হয়নি। ধারণা ছিল, লেকটি হয়তো-বা মহাসড়ক থেকে বেশ ভেতরে হবে, পক্ষান্তরে পথ বেশ দুর্গম। কিন্তু আদতে তা নয়। চমৎকার পিচঢালা রাস্তা ধরে মাত্র ৫ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম লেকের গেটে। গাড়ি গেটের বাইরেই পার্ক করার জন্য হলো। অবশ্য বিশেষ সম্মতি নিয়ে গাড়ি একেবারে লেকের পাড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়।


গেটের বাইরেই বেশ কতিপয় দোকানে ডাব, কলা, পেঁপে, চিপস, বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে। লোভ লক্ষ্য না করে জনপ্রতি ৩০ টাকায় টিকিট কিনে লেকসংলগ্ন পার্কে ঢুকে পড়লাম। ঢুকতেই আখিতে পড়ল জঙ্গল বিভাগ আর জল উন্নতি বোর্ডের নবনির্মিত দফতর আর রেস্টহাউস। খোঁজ নিয়ে জানলাম, এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম আরম্ভ হয়নি। পর্যটকের যাতায়াত বাড়লে নিশ্চয়ই তাদের উপযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।


সামনে সুন্দর বনের ভিতরে কর্তৃক পিচঢালা পথ। শীতের মধ্যে হালকা চড়াইয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছিল। দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে একটু অস্বস্তি হলেও অনায়াসেই সামান্য চড়াইতে লেকের পাড়ে পৌঁছাতে পারলাম। সম্মুখে তাকিয়েই নয়ন জুড়িয়ে গেল। সবুজাভ নীল পানিতে ভেসে রয়েছে বেশ কতিপয় কায়াক। দেখেই মনে ফিরে এল করোনাপূর্ববর্তী ক্যালিফোর্নিয়া ট্যুরে লেক তাহোতে কায়াকে ভেসে বেড়ানোর স্মৃতি। এই লেকের কয়াকিং অবশ্যই কম রোমাঞ্চকর হবে না। তা সত্ত্বেও এ যাত্রায় বিধিবাম। সাথে বাচ্চাকাচ্চা থাকায় কায়াকিংয়ের বাসনা আপাতত শিকেয় তুলে ইঞ্জিনবোট ভাড়া করলাম। দুই ঘণ্টায় অবিরাম লেক সঙ্গে মহামায়া নির্ঝর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।

মহামায়া ঝরনায় যেতে যেতে


সম্মুখে চমৎকার বনের ভিতরে দিয়ে পিচঢালা পথ। শীতের ভিতরে হালকা চড়াইয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছিল। দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে একটু অস্বস্তি হলেও অনায়াসেই নগণ্য চড়াইতে লেকের পাড়ে পৌঁছাতে পারলাম। সামনে তাকিয়েই অক্ষি জুড়িয়ে গেল। সবুজাভ নীল পানিতে ভেসে রয়েছে বেশ কিছু কায়াক। দেখেই মনে ফিরে এল করোনাপূর্ববর্তী ক্যালিফোর্নিয়া ট্যুরে লেক তাহোতে কায়াকে ভেসে বেড়ানোর স্মৃতি। এ লেকের কয়াকিং নিশ্চয়ই কম রোমাঞ্চকর হবে না। তবুও এই যাত্রায় বিধিবাম। সঙ্গে বাচ্চাকাচ্চা থাকায় কায়াকিংয়ের বাসনা আপাতত শিকেয় তুলে ইঞ্জিনবোট ভাড়া করলাম। দুই ঘণ্টায় অবিরাম লেক সঙ্গে মহামায়া ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।


গন্তব্য মহামায়া ঝরনা


বোটের ইঞ্জিনের টানা যান্ত্রিক কিওয়ার্ড প্রথমে বিরক্তির উদ্রেক করলেও একসময় কান সওয়া হয়ে গেল। কয়েকটি দূর এগোতেই দেখি লেকের মাঝে বেশ কিছু ছোট ছোট দ্বীপ। কোনোটিতেই স্থায়ী মানুষ্য বসতি নেই, কিন্তু কয়েকটি কিছু দ্বীপে দেখলাম আস্তানা বিদ্যমান আর সামনে কয়েকজন ছিপ দ্বারা মাছ ধরায় ব্যস্ত। ইউরোপে উইকেন্ডে এই দৃশ্য খুবই পরিচিত হলেও আমাদের কান্ট্রিতে নতুনই মনে হচ্ছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, স্বল্পব্যয়ে টিকিট কেটে এ লেকে মাছ ধরা যায়, প্যাকেজে তাঁবুতে রাত্রি যাপন করা যায়। দুই বেলার খাবারসহ তাঁবুতে রাত্রি যাপন করার জনপ্রতি ৭৫০ টাকা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পারলে অচিরেই এই লেকের জনপ্রিয়তা আসমান ছোঁবে, এটা নিশ্চিত।

লেকের যত নিবিড়ে ঢুকছিলাম, ততই নির্জনতা বাড়ছিল। এ নির্জনতা উপভোগ্য। শুধুমাত্র যদি ইঞ্জিন বোটের বদলে বইঠা বাওয়া নৌকা নিয়ে আসা যেত, নির্জনতা এইরকম মনোরম হতো, এ কথা বলাই বাহুল্য। আরও কিছু মুছে যেতেই দেখি কয়েকজন জেলে নৌকা থেকে জাল ফেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। পুরাই যেন চিত্রপটে অঙ্কন করে ছবি। তারপর আর জনমানুষের লক্ষ্য নেই। যত মুছে দৃষ্টি যায় অবারিত সবুজাভ জল আর আকাশছোঁয়া পাহাড়ে সবুজের ছড়াছড়ি। তন্ময় হয়ে এনজয় করছিলাম এ অপার্থিব সৌন্দর্য। ইট, কাঠ, পাথরের ক্লেদাক্ত শহুরে মনের জমা পঁচা ঝামা ঘষে ক্লিয়ার করার জন্য এ রকম নির্জনতায় হারিয়ে যাওয়াটা জরুরি। এক লহমায় মনের ক্ষতগুলোতে যেন প্রকৃতি তার নমনীয় পরশ বুলিয়ে সুস্থ করে তুলল।

No comments

Powered by Blogger.