Header Ads

মাহমুদউল্লাহর ‘বিশ্রাম’, নাকি বিদায়

মাহমুদউল্লাহর ‘বিশ্রাম’, নাকি বিদায়

কাউকে দল থেকে বাদ দিয়ে বিতর্কমুক্ত থাকতে চাইলে ‘বিশ্রামের’ মতো নিরাপদ শব্দ আর নেই। বলে দিলেই হলো, ‘তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।’ ব্যস, সব মুখ বন্ধ। আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডের দলে মাহমুদউল্লাহতাইজুল ইসলামকে না রাখার ব্যাখ্যায় এই শব্দটাই বেছে নিয়েছেন নির্বাচকেরা—‘বিশ্রাম’।


যদিও এই যাত্রায় দুই ‘বিশ্রামের’ দুটোই আলোচনা উস্কে দিচ্ছে। দুটো নিয়ে দুই রকম আলোচনা। সামান্য কথায় তাইজুলেরটাই প্রথমে জানানো যাক। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে তাঁর ক্যারিয়ার প্রায় সাড়ে আট বছরের। তা সত্ত্বেও ৪০টি টেস্টের সাইডে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ১৫টি। এই ১৫ ম্যাচের ভিতরে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল উইকেটশূন্য ছিলেন মাত্র তিনটিতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সম্পন্ন ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে তাঁর উইকেট ৬টি, উনি কোনো ধরনের চোটে পড়েছেন বলেও শোনা যায়নি। তাহলে তাইজুলকে অকস্মাৎ বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন কেন পড়ল?


গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এর একটা বর্ণনা দেওয়ার ট্রাই করেছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার। যার সারমর্ম দাঁড়ায়—যাহা তাইজুল, তাহাই নাসুম। তাইজুল সব সময় সুন্দর খেলেন বলেও হাবিবুল যেন মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য চাইলেন, সাদা বলের ক্রিকেটে নাসুমই তাঁদের প্রথম পছন্দ। অবশ্য বাঁহাতি স্পিনারদের ‘ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে’ খেলানোর কথা বলে ভবিষ্যতের জন্য একটা ফাঁক তিনি রেখে দিয়েছেন।


নির্বাচকদের ‘বিশ্রাম’তত্ত্বে মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গটাই বড়। আয়ারল্যান্ড সিরিজ হতে ‘বিশ্রাম’ দূরদর্শী এই ক্রিকেটারের ওয়ানডে ফিউচার নিয়েই যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে! টেস্ট ক্রিকেট হতে পূর্বেই অবসর নিয়েছেন। টি–টোয়েন্টিতে থেকেও নেই। এই যাত্রায় ওয়ানডেতেও মাহমুদউল্লাহর আর ফেরা হবে কি না, ২০২৩ বিশ্বকাপের দরজাই–বা তাঁর জন্য কতটা উন্মুক্ত; বাংলাদেশের ক্রিকেটে অধুনা আলোচনা এ নিয়েই।

মাহমুদউল্লাহর ‘বিশ্রাম’, নাকি বিদায়


নির্বাচকেরা বলেছেন, নতুনদের দেখার চান্স নিতেই পরীক্ষিত ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহকে দলের বাইরে রাখা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে পক্ষির চক্ষু করে এগোচ্ছেন তাঁরা। ওই স্থান যদি সহসা করে নতুন কাউকে দলে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, আগে হতে দেখে–টেখে না রাখলে তো তখন হুট করে কাউকে বিশ্বকাপে খেলিয়ে দেওয়া যাবে না। কাজেই মাহমুদউল্লাহ একটু ‘বিশ্রাম’ নিক, এ সুযোগে তাঁরা অন্যদের দেখে নেবেন।


মাহমুদউল্লাহকে ওয়ানডের হিসাব–নিকাশ হতে এখনো পুরোপুরি বাতিল দেননি বলেই দাবি নির্বাচকদের। শ্রেষ্ঠ নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন তো গতকাল মুঠোফোনে পাল্টা প্রশ্নই করে বসলেন, ‘সপ্তাহখানেকের মধ্যে ২২ থেকে ২৪ জন ক্রিকেটারের একটা পুল ঘোষণা করব আমরা। বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই পুল থেকে খেলোয়াড় নিয়েই দল  হবে। পুলে মাহমুদউল্লাহও থাকবে। তাহলে সে আমাদের চিন্তাভাবনায় নেই, এটা কীভাবে বলবেন?’


২০২৩ বিশ্বকাপের এখনো ছয়-সাত মাস বাকি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ ছাড়াও বিশ্বকাপের প্রথমে এইরকম খেলা-ধুলা বিদ্যমান বাংলাদেশের। যত আলোচনাই হোক, মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের উপসংহার এজন্য এখানেই টেনে দেওয়ার উপায় নেই। যদি প্রিমিয়ার লিগে অতিমানবীয় কতিপয় করেন! মাঝে জাতীয় দলে কোনো ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস দেখান! তারপরও প্রশ্ন থাকে, বিশ্রামের জন্য যে মাহমুদউল্লাহকেই বেছে নেওয়া হলো, জানানো চমৎকার বেছে নেওয়া গেল; সেটি কী আভাস দেয়?


নির্বাচকদের বিকল্প সন্ধানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুনেরা বেশ ভালো খেললে নিশ্চয়ই  বাদ দিয়ে শুধু ‘অভিজ্ঞ’ কোটায় ওয়ানডে দলে ফিরতে পারবেন না ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ। পরের সিরিজে তিনি ‘অটোমেটিক চয়েস’ হবেন কি না, সুনির্দিষ্ট এ প্রশ্নে গতকাল হাবিবুলের নিরুত্তর থাকাও যেন অনেক বড় উত্তর। মাহমুদউল্লাহর জন্য এখন হয়তো এটাই বাস্তবতা।


ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের তিন ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর রান ৪৮ বলে ৩১, ৪৯ বলে ৩২ ও ৯ বলে ৮। গত ডিসেম্বরে মিরপুরে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অর্ধশতক করেছিলেন। বাংলাদেশ সে ম্যাচটা জিতলেও মাহমুদউল্লাহর ৯৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংস নেগেটিভ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল মাঝে টিমের রান রেট কমিয়ে দেওয়ায়। ফিটনেসের কারণে ফিল্ডিং নিয়েও বিদ্যমান প্রশ্ন। ক্যাচ পড়ছে, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও গতি হারিয়ে ফেলছেন। মাহমুদউল্লাহ দলে থাকা মানেই যেন একজন ব্যাকআপ ফিল্ডারও সঙ্গে রাখা!


তবু মাহমুদউল্লাহ এখনো আশাবাদী থাকতেই পারেন। আসলে একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের সম্পন্ন দৃশ্য কখনোই এ রকম টুকরা টুকরা ফটো জোড়া লাগিয়ে এঁকে ফেলা যায় না। কেউ নিজ হতে অবসর না নিলে বলে দেওয়ার চান্স নেই, তিনি এখানেই শেষ। নির্বাচকেরা যতই কাউকে ‘বিশ্রাম’ বা বাদ দিন না কেন, ‘শেষ’ বলার কর্তৃত্ব কেবলই ক্রিকেটারের।


মাহমুদউল্লাহর মতো পোড় খাওয়ারা তার আগ পর্যন্ত ফিরে প্রবল বৃষ্টিপাত লড়াই চালিয়ে যান। কেউ তাতে জেতেন, কেউ যান হেরে। সে জন্যই এটি খেলা।



No comments

Powered by Blogger.